Monday, July 9, 2018

বিমান- সর্ম্পকে কিছু মজার তথ্য


১) ক্ষুদ্রতম বিমানের রেকর্ড

বিমানের গঠন বৈচিত্র্যে যেমন বিভিন্নতা লক্ষিত হয় তেমনি আকৃতির দিক থেকেও একের সঙ্গে অন্যের যথেষ্ট পার্থক্য থাকে। এমন একটি বিমানের খোজ পাওয়া গেছে যার আকৃতি এত ছোট যা আমাদের একেবারেই কল্পনা বহির্ভুত।
রেস্টিকস নামক এক মার্কিন বিজ্ঞানী নিজেদের কারখানায় এমন একটি অত্যাশ্চর্য বিমান তৈরী করেছেন যার নামকরণ করা হয়েছে স্কাই বেবী। সেটির নক্সাও তৈরী করেছেন মিঃ রেটিকস নিজেই। এটির ওজন সর্বসাকুল্যে চার শ' বাহান্ন পাউন্ড। আরও আশ্চর্য ব্যাপার। বিমানটি যত ছোটই হোক না কেন সেটি ছোটে কিন্তু ঘন্টায় এক শ’ পচাশি মাইল বেগে।

২) বিশ্ব পরিক্রমা

ক্রমান্বয়ে বিমান চালিয়ে পৃথিবীর অধিকাংশ স্থান প্রদক্ষিণ করার কাজটি নেহাৎ সাধারণ ব্যাপার নয়। বরং বলা চলে অসাধ্য সাধন করা। ওয়াইলি পোস্ট নামে এক উচ্চাভিলাষী যুবক এই অসাধ্য সাধন করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
কোন প্রতিযোগিতার ব্যাপার নয়। একা একেবারে একা ছোট একটি বিমান নিয়ে। তিনি দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর অধিকাংশ স্থান প্রদক্ষিণ করেন। তিনি মোট পনের হাজার পাঁচশ ছিয়ানব্বই মাইল পথ এক শ’ পঞ্চান্ন ঘণ্টা ত্রিশ সেকেন্ডে অতিক্রম করে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। আরও আছে, ওয়াইলি পোস্ট নিরক্ষীয় বৃত্তের সঙ্গে সাধ্যমত দূরত্ব বজায় রেখেই পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চল প্রদক্ষিণ করেন। 

৩) প্রথম যাত্রীবাহী বিমান

উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেট বিমান বোয়িং ৭৪৭ ‘জাম্বো’ জেট। এটি সর্বপ্রথম উনিশ শ’ উনসত্তর খ্রীস্টাব্দের নয়ই ফেব্রুয়ারী আকাশে উড়েছিল এটির যাত্রী বহন ক্ষমতা পচিশ জন। আর গতিবেগ ঘন্টায় দুশ দু'মাইল অৰ্থাৎ ন’ শ’ উনসত্তর কিলোমিটার। এর দৈর্ঘ্য প্রায় একশ’ ছিয়ানব্বই ফুট। এবং বিমানটির দৈর্ঘ্য প্রায় দু’ শ’ ডানার বত্রিশ ফুট। এটি যাত্রীবহনের কাজে প্রথম ব্যবহৃত হয় উনিশ শ’ সত্তর খ্রীস্টাব্দের বাইশে জানুয়ারী। আবার বোয়িং ৭৪৭-৩০০-তে একটি পৃথক দীৰ্থ স্থান আছে। যাতে অতিরিক্ত সাইরিশ জন যাত্রীর সম্মুলান হয়। এটি প্রথম যাত্রীবহনের কাজে ব্যবহৃত হয় উনিশ শ তিরাশি খ্রীস্টাব্দের মার্চ মাসে। এবার আরও অধিক যাত্রীবহন ক্ষমতাসম্পন্ন বিমানের খোজ করা যাক। ট্রান্স-আমেরিকা এয়ার লাইন বোয়িং ৭৪৭ বিমানটি প্রথম আকাশে ওড়ে । উনিশ শ’ একাশি খ্রীস্টাব্দের সাতাশে ফেব্রুয়ারী। এটিই বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টিকারী যাত্রীবাহী বিমান এতে দুশ দশটি আসন রয়েছে।

৪) বিমানের বৈচিত্র্য 

আমরা যদি আরও কয়েক বছর পিছিয়ে গিয়ে বিশ শতকের গোড়ায় চলে যাই অর্থাৎ বিমানের একেবারেই শৈশবাবস্থায় ফিরে যাই তবে আমরা কি দেখতে পাব? দ্য রো-১ নামক বিচিত্র ধরনের এক বিমানের ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠবে। সত্যই বিচিত্র তার গঠন প্রক্রিয়া যা আমাদের বিস্ময় উৎপাদন করতে বাধ্য। ‘দ্য রো-১ নামক বিচিত্র ধরনের এই বিমানটি উনিশ শ’ ন’ খ্রীস্টাব্দে ইলিয়ট বারডন্ রো নামক এক প্রৌঢ় বিজ্ঞানী তৈরী করেছিলেন। বিমানটি তৈরী করা হয়েছিল কাঠ দিয়ে আর শক্ত বাদামী কাগজ দিয়ে তার ছাউনি দেওয়া হয়েছিল। আর তার সামনের দিকে দুইটি এবং পিছনের দিকে একটি—মোট তিনটি সাইকেলের মত চাকা লাগানো ছিল। বিমানটি চলার সময় অনবরত ঝন ঝন শব্দ নির্গত হত। আজকের মানুষের কাছে এমন বিচিত্র কোন বিমান বাস্তবিকই অকল্পনীয়।

৫) সৌরশক্তি বিমান চালায়

আমরা জানি বিমানের শক্তি যোগায় পেট্রোল। কিন্তু যদি বলা যায় সৌরশক্তির সাহায্যেও বিমান চালানো যেতে পারে তবে তা আমাদের হাসির উদ্রেক করতে বাধ্য। কিন্তু পল ম্যাকক্লেডী নামক বিজ্ঞানী উনিশ শ’ আশি খ্রীস্টাব্দে সৌরশক্তির সাহায্যে এরকম চলতে সক্ষম অত্যাশ্চর্য একটি বিমান তৈরী ক’রে বিশ্বে চমক সৃষ্টি করেছেন। এটিই সৌরশক্তির সাহায্যে চলনযোগ্য প্রথম বিমান। বিজ্ঞানী ম্যাকক্রেী নিজেই বিমানটির নক্সা তৈরী করেন। সেটির ওজন সর্বমোট দু' শ’ পচাত্তর পাউন্ড। উনিশ শ’ আশি খ্রীস্টাব্দের বিশে নভেম্বর এটিকে সৌরশক্তির সাহায্যে প্রথম চালানো হয়। তারপর এটি অসাধ্য সাধন করে উনিশ শ’ একাশি খ্রীস্টাব্দের সাতই জুলাই। সেদিন এটি অনায়াসে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে সমগ্র বিশ্বে রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি করে।

৬) বিমানের শৈশব

উনিশ শ সাতাশ খ্রীস্টাব্দের কথা। সে সময়কে বিমানের শৈশবকাল বলা চলে। দীর্ঘদিন নিরলস কঠোর সাধনায় ব্রতী থেকে দেশ-বিদেশের বৈজ্ঞানিকগণ বিমান। নির্মাণশিল্পকে আজ উন্নতির চরম শিখরে পৌছে দিয়েছেন। তবু আজও বিজ্ঞানীগণ নিরবচ্ছিন্ন কঠোর সাধনায় লিপ্ত রয়েছেন, কি করে আকাশপথে আরও অল্প সময়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব। যে সময়ের কথা আলোচনা হচ্ছে তখন ছোট বিমানে আমেরিকান স্পেস সেন্টার তেত্রিশ ঘণ্টা ত্ৰিশ মিনিট প্রথম আটলান্টিক মহাসাগর আড়াআড়িভাবে অতিক্রম করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল। ছোট সেই বিমানটি চালনা করে অসাধ্য সাধন করেছিলেন আমোরকা। যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী এক অত্যুৎসাহী যুবক। তার নাম ছিল চার্লস এ. লিন্ডবার্গ। তিনি এই অসাধ্য সাধনের পুরস্কারস্বরূপ নগদ পচিশ হাজার পাউন্ড লাভ করেছিলেন।

No comments:

Post a Comment