Monday, April 23, 2018

ঘড়ি সম্পর্কে পাঁচটি মজাদার এবং আকর্ষণ পূর্ণ তথ্য যা আপনাকে চমকে দেবে


১. প্রাচীনতম ঘড়ি - ঘড়ির আবিষ্কারক দেশ নিয়ে নানা মুনির নানা মত বিদ্যমান। তবে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে প্রাচীনতম যান্ত্রিক ঘড়ি প্রথম চীনদেশই বানায়। যান্ত্রিক ঘড়ি এস্কেপযুক্ত। চীনের লিয়াঙ্ লিঙ্-সান এবং ই সিঙ নামে দুজন চীন যন্ত্রবিদ ৭২৫ খ্রীস্টাব্দে নিষ্ঠা,ধৈর্য এবং অধ্যবসায় সম্বল করে একটি যান্ত্রিক ঘড়ি তৈরী করে সমগ্র বিশ্বকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করে গেছেন। তারপর থেকেই যান্ত্রিক কৌশলের উন্নতি সাধন করে ঘড়ির উন্নতি সাধনের জন্য বহু উৎসাহী ব্যক্তি কঠোর সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন।

চীনদেশে তৈরী প্রাচীনতম ঘড়িটির আজ আর অস্তিত্ব নেই। তবে আজ যেটি প্রাচীনতম বলে বিবেচিত হচ্ছে সেটিকে দেখা যাবে ইংল্যান্ডের অন্তর্গত উইল্ট সায়ারে। সেখানকার প্রাচীন সলিসবারির গীর্জার মাথায় সেই কবে থেকে অবস্থান করে এটি পথচারীদের সময় নির্দেশের মাধ্যমে কর্তব্য পালন করে চলেছে। ১৮৩৬ খ্রীস্টাব্দে ঘড়িটি তৈরী করা হয়েছিল। যন্ত্র অভিচালিত ঘড়ি এটি। তবে বর্তমানকালে তৈরী ঘড়ির সঙ্গে এর সাদশ্যের চেয়ে বৈসাদৃশ্যই বেশী করে লক্ষিত হয়। সব চেয়ে বেশী করে যে বৈসাদৃশ্য নজরে পড়ে তা হচ্ছে ঘড়িটির ঘন্টা-মিনিট জানার মত কোন চিহ্ন নেই। টিক টিক করে আওয়াজ হয়, কাটাও ঘোরে। প্রায় ৫০০ বছর ধরে ঘড়িটি কর্তব্য সম্পাদন করেছে। ইদানীংকালে ১৯৫৬ সালে ঘড়িটির কলকব্জা বিকল হয়ে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। ঘড়ি বিশেষজ্ঞ ডেকে সারাই করানো হয়। তারপর দিন আর বেশী অতিবৃদ্ধ ঘড়িটি তার চলার গতি অব্যাহত রাখতে পারল না। ১৯৮১ সালের শেষের দিকে আবার ঘড়িটি বিকল হয়ে যায়। শত চেষ্টাকরেও সেটিকে আর রোগমুক্ত করে সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। তবে সেটিকে ধ্বংস না করে স্মারক হিসাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


২. বিচিত্র ঘড়ি- এবার পুরনো দিনের একটি বিশেষ ধরনের ঘড়ির কথা নতুন করে বলছি। ঘড়িটির বিশেষত্ব হচ্ছে, এর ওপর ভারি কিছু একটি বস্তু চাপিয়ে দিলে ঘড়িটি টিকটিক করে চলতে থাকে। কিন্তু ভারি বস্তুটি নামিয়ে ফেললে বা নির্দিষ্ট ওজন হ্রাস করে দিলে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ঘড়িটির নাম ‘ওয়েট ড্রাইভেন ওয়াচ’। এরকম একটি অদ্ভুত ও বিচিত্র চরিত্রের ঘড়ি আজও সমারসেটের ওয়েলস্ গীর্জায় রক্ষিত আছে। সেটি ১৩৩৫ খ্রীস্টাব্দে তৈরী হয়েছিল বলে বিশেষজ্ঞগণের ধারণা। ইদানীংকালে এর বহু যন্ত্রাংশ পাল্টানো হয়েছে। কেবলমাত্র খোলসাটি ছাড়া আর সবই পাল্টানো হয়েছে বললেও অত্যুক্তি হবে না।

৩. ঘড়ির রাজা - যে-ঘড়ির গঙ্ অর্থাৎ ঘন্টাধ্বনি ‘বি.বি.সি’ (ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন) থেকে প্রতিদিন সমগ্র বিশ্ববাসীকে শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে তাকে ‘ঘড়ির রাজা আখ্যা না দিলে তার প্রতি অবিচার করার দায়ে অভিযুক্ত হতে হবে, ঠিক কিনা?
হা, ওই সৌভাগ্যবান ঘড়িটির নাম “বিগবেন্"।

৪. পৃথিবীর সর্বাধিক ওজন বিশিষ্ট ঘড়ি - এবার খোজ নিয়ে দেখা যাক, পৃথিবীর সর্বাধিক ওজন বিশিষ্ট ঘড়ি কোনটি?১০৮৮ খ্রীস্টাব্দে চীনের অন্তর্গত কাঙ্-ফেং নামক স্থানে একটি ঘড়ি তৈরীর কাজ শুরু হয়েছিল। আর ১০৯২ খ্রীস্টাব্দে সেটি প্রথম সময় নির্দেশ করতে শুরু করেছিল। এটি কেবলমাত্র ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরী ফ্রেমটি বৃত্তাকার। ওজন? ২২ টন। পিলে চমকে দেবার মত ওজনই বটে। তবে এটি জলঘড়ি। দেড় টনের বেশী জল ঘড়িটির ভেতরে চাপ সৃষ্টি করলে তবেই সেটি সচল থাকত। ১১২৬ খ্রীস্টাব্দে এটিকে স্থানান্তরিত করে বেজিং শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরও ১০ বছর অর্থাৎ ১১৩৬ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত এটি সচল ছিল। আজও অচল হলেও ঘড়িটিকে স্মৃতি হিসাবে টিকিয়ে রাখা হয়েছে।

৫.বৃহত্তম দেওয়াল ঘড়ি - অতিকায় জলঘড়ির খোজ তো পাওয়া গেল। এবার বাকি রইল বৃহত্তম দেওয়াল ঘড়ির খোঁজ নেওয়া। ফ্রান্সের বিউভাস গীজার ওপরে অবস্থিত ঘড়িটিই দেওয়াল ঘড়ির সমাজে বৃহত্তমের দাবী করতে পারে। ১৮৬৫ খ্রীস্টাব্দে এর কাজ শুরু করে শেষ করা হয়েছিল ১৮৮৮ খ্রীস্টাব্দে। ‘বৃহত্তম’ ছাড়াও এর বিশেষত্ব হচ্ছে,জ্যোতির্গণনামূলক’ (এষ্ট্ৰনমিক্যাল ক্লক) অর্থাৎ জ্যোতির্বিজ্ঞান সহায়ক ঘড়ি। এর উচ্চতা ৪০ ফুটের ঊর্ধ্বে, প্রস্থ ২০ ফুট, আর গভীরতা ৯ ফুটেরও বেশী। ছোট বড় যন্ত্রাংশের সংখ্যা ৯০,০০০ বেশী ছাড়া কম নয়।


৬. ভারতের সূর্যঘড়ি - ঘড়ির ব্যাপারে ভারত বড়াই করতে পারে ‘সূর্যঘড়ি নিয়ে। বাংলায় একটি সূর্যঘড়ি আজও বহাল তবিয়তে অবস্থান করে সূর্যের আলোর সঙ্গে মিতালি করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিব্যি সময় নির্দেশ করে চলেছে। এটি হুগলী জেলায় হাজী মহম্মদ এর বাড়িতে, গঙ্গার ধারে অবস্থান করছে ভারতবিখ্যাত সূর্যঘড়ি 'যন্তর মন্তর’-এর দর্শন পাওয়া যাবে রাজধানী দিল্লীতে। তবে জয়পুরেও একটি অতিকায় সূর্যঘড়ি রয়েছে।

No comments:

Post a Comment