Friday, June 15, 2018

৮ টি অসাধারণ ও মজার তথ্য



১) উমিয়াক ও কায়াক কি?

উত্তরমেরু অঞ্চলে উমিয়াক (মেয়েদের নৌকো) ভারর বহার জন্যে ব্যবহৃত হয়—এ নৌকো খুব বড়-এর উপর কোন আচ্ছাদন থাকে না। এতে মেয়েদের, ছেলেদের ও ঘরকন্যার জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হয়। কোথাও যেতে গেলে এস্কিমোরা মালপত্র , ছেলেমেয়ে নিয়ে উমিয়াকে চড়ে।
উত্তরমেরুবাসীদের হালকা নৌকোকে বলে কায়াক। তিমির হাড় আর জলে ভেসে আসা কাঠ দিয়ে এই নৌকোর কাঠামো তৈরী হয়। তারপর সীল মাছের চামড়া দিয়ে এর গা ঢাকা দেওয়া হয়। কায়াকে করে একজন মাত্রা যেতে পারে। এর উপর-নীচ সব সীলের চামড়া দিয়ে ঢাকা থাকে। নৌকাচালক এর মধ্যে পা ছড়িয়ে বসে থাকে। এ নোঁকে খুব হালকা আর দ্রুতগামী। এ নৌকা চালানোর কৌশল এস্কিমোরাই জানে। কায়াক সীল ও সিন্ধুঘোটক শিকারের কাজে লাগে। এর দ্বারা বেশী বোঝা বহা যায় না। 


২) তিমি মাঝে মাঝে জলের উপর ভেসে ওঠে ( 
কেন ?


তিমি জলের প্রাণী হলেও মাছ নয়। কুড়ি মিনিট থেকে আধ ঘন্টার বেশী এরা জলের তলায় থাকতে পারে না। শ্বাস নেবার জন্যে এরা মাঝে মাঝে জলের উপর ভেসে ওঠে। এদের মাথার উপর একটা বা একাধিক ফুটো থাকে। এরা প্রথমে এই ফুটো দিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে দেয়। তখন আমরা ফোয়ারার মতো জল উঠতে দেখি। জলের সঙ্গে মেশানো বাতাসে এরা বাঁচতে পারে ন। তাই এরা মাঝে মাঝে জলের উপর ভেসে ওঠে।


৩) জীবজন্ত ও কীটপতঙ্গরা কি কথা বলতে পারে ?


আমরা যেমন কথা বলি তেমনি অন্য কোনো জীবজন্ত বা কীটপতঙ্গ কথা বলতে পারে না , তবে অনেকে নিজেদের পদ্ধতিতে কথা বলে। কুকুর রাগলে ডাকে , অন্য কুকুরকে বিপদ থেকে সাবধান করে দেবার সময় চেঁচায় , আনন্দ প্রকাশ করতে চীৎকার করে। মা - পাখি বাচ্চাদের উড়তে শেখাবার সময় কত কি বলে তাদের উৎসাহ দেয়। বাছুরের ক্ষিদে পেলে তার মাকে ডাকে। বানরদের নানা ভাষা আছে।
শুয়োরের তীক্স চিৎকার, ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি, ভেড়ার ডাক, হাতির ডাক, গরুর হাম্বারব, গাধার চীৎকার শুনে মনে হয় ওরা যেন মনের কোন ভাব প্রকাশ করে।
ভয় পেলে চীৎকার করে সে ভাব জম্বর পরস্পরের মধ্যে জানিয়ে দেয়।
মৌমাছি, পিপড়ে, উই ইত্যাদি অনেক পতঙ্গও নিজেদের ভাব প্রকাশ করে। তা না হলে এরা এক সঙ্গে কাজ করে কি করে ? পিঁপড়েরা তাদের শুড় দিয়ে জড়িয়ে অন্য পিপড়েকে মনের কথা জানায়।


৪) একটা প্রকান্ড কাঠের গুড়ি জালে ভাসে, কিন্তু একটা ছোট্ট নুড়ি জলে ডুবে যায় কেন ?


কাঠের উপাদানগুলি পাথরের উপাদানগুলির চেয়ে হালকা। কাঠের উপাদানের মধ্যে ফাঁক আছে, কিন্তু পাথরের উপাদানের মধ্যে ফাক নেই, সবটাই নিরেট। জলের উপাদানগুলির চেয়ে যা হালকা জিনিস তা জলে ভাসে আর যেগুলি জলের উপাদানের চেয়ে ভারী তারা ডুবে যায়। কাঠের চেয়ে জলের উপাদান ঘন - তাই কাঠ জলে ভাসে। পাথরের উপাদান জলের চেয়ে ঘন, তাই পাথর জলে ডুবে যায়।


৫) গাছ মাটি ফুড়ে উপর দিকে
ওঠে কেন ?


গাছের সবটাই মাটি ফুড়ে উপরে ওঠে না। তার একাংশ মাটির তলায় চলে যায়-তাকে বলে শিকড়। গাছ যে জন্যে তৈরি সেই কাজ করবার জন্যে বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন দিকে যায়। গাছ বীজ থেকে জন্মায়। বীজের মধ্যে কতকগুলো কোষ (cell) থাকে। তাদের কতকগুলো কোষ আলো ও বাতাসে জন্মাবার জন্যে তৈরী। সেই কোষগুলো আলোর দিকে যায়। আর কতকগুলো কোষ অন্ধকারেই ভালো জন্মায়। আর তাদের উপর মাধ্যাকর্ষণও কাজ করে। তারা মাটির বুকের মধ্যেই ভালো জন্মায়।
বীজটাকে উলটো করে পুঁথতে দেখা গেছে যে
তার যে অংশ আলো ও বাতাসে জন্মায় তা আলো
ও বাতাসের দিকে বেঁকে ঘুরে ওঠে আর শিকড়ের
অংশটা মাটির দিকে আপনা থেকেই নেমে যায়।
প্রত্যেক গাছের দুটি অংশ থাকে। একটা চায় আলোবাতাস আর একট৷ চায় মাটির অন্ধকার ও মাধ্যাকর্ষণের টান। কোন তাংশ বাদ দিলে গাছ জন্মাতে পারে না। গাছের নীচের অংশ মাটি থেকে শিকড়ের সাহায্যে জলীয় ধাতব লবণ গ্রহণ করে আর উপরের অংশ তার পাতার সাহায্যে আলো আর বাতাস খাদ্যরূপে গ্রহণ করে।


৬) সকালে আমাদের ঘুম ভেঙে যায় কেন ?


সারারাত আমরা একই ভাবে ঘুমাই না- সারারাতের ঘুমটা একই রকম গভীর হয় না। প্রথমে আমরা খুব গভীরভাবে ঘুমাই-সে ঘুম আমাদের শরীরকে সুস্থ করে। ইংরেজীতে এই রাতের গভীর ঘুমকে বলে beauty sleep. কিন্তু এই গাঢ় ঘুমের পর ক্রমশ আমাদের ঘুম পাতলা হয়ে যায়। গাঢ় ঘুমের সময়ে জোরে শব্দ হলেও আমাদের ঘুম ভাঙে না, কিন্তু পাতল ঘুমের সময়ে সামান্য শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়।
সকালের দিকে ঘুম যখন পাতলা হয়ে যায় তখন আলো বা পাখির ডাক বা অন্য শব্দে আমরা জেগে উঠি। মানুষ যখন বাইরে খোলা প্রকৃতির মধ্যে থাকত, তখন তারা আলো ফোটবার সঙ্গে সঙ্গে পাখিদের মতো জেগে উঠত। শরীর ক্লান্ত হলেই ঘুম আসে। ক্লান্তি কেটে গেলে ঘুমের ঝোঁক কমে যায়। আমাদের মস্তিষ্ক আবার জেগে উঠে কাজ করে। তখন সামান্য আলো, সামান্য শব্দ ইত্যাদিতে আমাদের স্নায়ু উত্তেজিত হয়ে ওঠে, আমরা জেগে উঠি । এছাড়া সকালে ওঠার অভ্যাসও আমাদের ঠিক সময়ে জাগিয়ে দেয়।


৭) খাদ্য ছাড়া কি কোন জীব দীর্ঘকাল বাচতে পারে ?


একজাতীয় মাকড়সা আছে, তারা দীর্ঘকাল খাদ্য না খেয়ে বাঁচতে পারে। এ মাকড়সা জলে থাকে। এর নাম জলভালুক।
এরা ভিজে আবহাওয়ায় থাকে, কিন্তু বাতাস শুকনো হলে এরা শুকিয়ে যায়। এরা তখন নড়াচড়া করতে পারে না। এদের শরীর তখন গুটিয়ে একটা শুকনো বীজের মতো হয়ে যায়। এই অবস্থায় এর মড়ার মতো অনেক বছর পড়ে থাকে। জলে এনে রাখলে এরা জল শুষে ক্রমশঃ পাগুলো ছড়িয়ে দেয়, তারপর নড়াচড়া করে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে এরা চটপটে হয়ে ওঠে আর পায়ের উপর ভর দিয়ে চলে যায়। কয়েক রকম শামুকও অনেক বছর মড়ার মতো খাদ্য ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে।


৮) সবুজ গাছপালা কিভাবে খাদ্য-পানীয়।
গ্রহণ করে ?


সবুজ গাছপালারা শিকড়ের ছোট ছোট চুলের মতো সরু মুখ দিয়ে জল পান করে। প্রত্যেক ঢোঁকে তারা শুধু জলই পান করে না, সেই সঙ্গে নানা রকম ধাতব লবণও খায়। এই সব লবণ জলের সঙ্গে গোলা অবস্থায় থাকে। এই লবণ এরা গাছের পাতায় পাঠিয়ে দেয়। পাতা সেগুলো কাজে লাগায়। শিকড়ের সরু সরু চুলের মতো অংশ দিয়ে গাছ জল পান করে কিন্তু খাদ্য খেতে পারে না। সবুজ গাছপালার আহার তৈরি করে তাদের পাতারা। গ্রীষ্মকালে যখন প্রচুর রোদ থাকে আর একটুও হাওয়া বয় না তখন মনে হয় গাছের পাতারা আলস্যে দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখেছেন যে তখন পাতাগুলোর মধ্যে চলে নানা ধরনের কাজ। পাতাগুলো পৃথিবীর খাদ্যের কারখানা। জীবজন্তুরা এই খাদ্য খেয়ে বেঁচে থাকে। যে উপায়ে পাতারা খাদ তৈরি করে তাকে বিজ্ঞানীদের ভাষায় বলে সালোক-সংশ্লেষ। আলো থেকে যে শক্তি তাতেই এ কারখানা চলে। অন্ধকারে এই কাজ বন্ধ থাকে।
সালোক-সংশ্লেষ বুঝতে হলে আমাদের গাছের পাতায় যে ক্লোরোফিল (chlorophyll) আছে তা বুঝতে হবে। ক্লোরোফিল হচ্ছে গাছের পাতার সবুজ অংশ। গাছপালা কার্বন ডাই-অক্সাইড দিয়ে তাদের খাদ তৈরি করে। আলো এই কাজে গাছপালাকে সাহায্য করে।

No comments:

Post a Comment