<-খেয়ালের রাজা->
“ডাকটিকিটের রাশি-আমি ভালবাসি ,
যদি তা, পুরোনো হয়-ব্যবহার করা,
ছেড়া কাঁটা, ছাপমার, স্বদেশী, বিদেশী ;
তা সবে পরশি যেন হাতে পাই ধরা ! ”
এটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা। তিনি ডাকটিকিট জমাতে ভালবাসতেন । ডাকটিকিট জমানোর শখ সারা পৃথিবীজোড়া একটা মজার খেয়াল। এই শখকে বলে 'খেয়ালের রাজা আর রাজ-রাজড়াদের খেয়াল' (the king of hobbies and the hobby of kings). ভোবে না যে , এটা একটা ছেলেখেলা ; অনেক বয়স্ক লোক এই খেয়ালে মেতে আছেন। দেশ- বিদেশের টিকিট তো এমনি পাওয়া যায় না ! তাদের কিনতে হয়। কোন কোন টিকিট অনেক কষ্টে পাওয়া যায় বলে তাদের দাম বেড়ে যায়। কাজেই রীতিমতো সবরকম টিকিট জোগাড় করতে অনেক টাকা লাগে। কোন দেশের একটা নতুন টিকিট বেরুলে সে দেশের লোকেরা তাদের চিঠিপত্রে সেটা ব্যবহার করতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর যত টিকিট-সংগ্ৰহকারী সেটা সংগ্রহ করতে উৎসাহী হয়। অনেকে বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে সেটা সংগ্রহ করে ফেলে। যারা সংগ্রহ করতে পারে না তারা যায় টিকিটের দোকানে। সেখানে চাহিদা অনুযায়ী তার দাম বাড়ে বা কমে।
<-আধখানা ডাকটিকিটে বাইবেল->
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন বহু গুণী লোক রয়েছেন যাঁরা ধৈর্য, নিষ্ঠা ও
অধ্যাবসায় সম্বল করে দীর্ঘদিনের অনুশীলনের ফলে এমন ক্ষুদে অথচ স্পষ্ট অক্ষর লিখতে পারেন যা লিখতে পারা তো দূরের কথা আমরা কল্পনা করতে উৎসাহ পাই না। লণ্ডনের মিঃ সুইফট ক্ষুদে ক্ষুদে অক্ষর লিখে পৃথিবীতে এক অনন্য নজীর সৃষ্টি করেছেন। তিনি উনিশ শ’ আটষট্টি খ্রীস্টাব্দে আধখানা ডাকটিকিটের গায়ে বাইবেলের প্ৰাৰ্থনা পচিশবার লিখেছিলেন। তিনি প্রতি বর্গ মিলিমিটারে সাইত্রিশটি হরফ লিখে
রেকর্ড গড়েন।
<-ক্ষুদ্রতম ডাকটিকিট->
বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ডাকটিকিটটির প্রচলন ভবলিভিয়ার অন্তর্গত কলম্বিয়া রাষ্ট্রে। আঠার শ’ তেষট্টি থেকে ছেষটি খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত ওই বিশেষ টিকিটটি চালু ছিল। সেটির দৈর্ঘ্য ছিল ৮ মিলিমিটার এবং প্রস্থ ০.৩৭ মিলিমিটার। কলম্বিয়া সরকার খরচ বাঁচাবার জন্য ক্ষুদ্রতম টিকিটটি দশ- সেন্ট ন’ পেসো মূল্য নির্ধারণ করে চালু করে।
<-বৃহত্তম ডাকটিকিট->
বর্তমানে প্রচলিত বিশ্বের বৃহত্তম ডাকটিকিটটির দৈর্ঘ্য সাড়ে চার ইঞ্চি এবং প্রস্থ সাড়ে তিন ইঞ্চি। এর মূল্যমান আড়াই শ’ মিলস। সাইপ্রাস সরকার উনিশ শ’ চুয়াত্তর খ্রীস্টাব্দের দোসরা জুলাই এই অতিকায় ডাকটিকিটটি চালু করেন। আজও এর ব্যবহার দেখা যায়। তবে এক সময় চীন দেশে এর চেয়েও বড় একটি টিকিট চালু ছিল। সেটির দৈর্ঘ্য ছিল পৌনে দশ ইঞ্চি এবং প্রস্থ পৌনে তিন ইঞ্চি। এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য উনিশ শ’ তেরো খ্রীস্টাব্দে চীন সরকার এটি চালু করেছিলেন। এখন সে দেশের সরকার স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ কয়েকটি টিকিট সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
<-ডাকটিকিটের নিলাম->
এই তো মাত্র কয়েক বছর আগে মার্কিন দেশের এক অত্যুৎসাহী ভদ্রলোক দুটি মাত্র পুরনো ডাকটিকিট তিন লক্ষ আশি হাজার ডলারের বিনিময়ে নিলামে কিনেছেন। ইতিপূর্বে এত দামে ডাকিটিকিট কেনাবেচা বিশ্বের অন্য কোন দেশে হয়েছে বলে জানা যায়নি। টিকিট দুটোর প্রতিটির আসল দাম ছিল এক পেনি ক’রে। মরিশাস দ্বীপে ওই দুটো ডাকটিকিট গুলো এক সময় চালু ছিল। কমলা রঙবিশিষ্ট টিকিট দুটোর গায়ে আঠারো শ’ সাতচল্লিশ খ্রীস্টাব্দ ছাপা ছিল। আর কালি দিয়ে মরিশাস দ্বীপের সীলমোহর অঙ্কিত ছিল। এতে প্রমাণ হচ্ছে, ডাক টিকিট দুটো মরিশাস দ্বীপের এবং ব্যবহার করাও হয়েছিল সেখান থেকেই।
<-সর্বাধিক মূল্যের টিকিট->
একই দেশে ব্যবহৃত ডাকটিকিটের মূল্যমানের তারতম্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়। চিঠি, মানিঅর্ডার প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন মূল্যমানের টিকিট ব্যবহার করা হয়। আজ পর্যন্ত (উনিশ শ’ বিরানব্বই খ্রীঃ) বিশ্বের সর্বত্র যত মূল্যমানের ডাকটিকিট ছাপা হয়েছে তাদের মধ্যে কেনিয়া থেকে উনিশ শ’ পচিশ খ্রীস্টাব্দে রাজা পঞ্চম জর্জের মুখওয়ালা ডাকটিকিটের মূল্যই সবচেয়ে বেশী। টিকিট যেটি ছাপা হয়েছে তার দাম একশ’ পাউন্ড। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি রেভিনিউ স্ট্যাম্প হিসাবে ব্যবহৃত হত।
এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment