Sunday, June 17, 2018

সংবাদপত্র-এর নানান আকর্ষণীয় তথ্য


১] আমেরিকার প্রথম সংবাদপত্র

পৃথিবীর প্রাচীনতম সংবাদপত্র (দৈনিক) ষোল শ' পঞ্চাশ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহর থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। তার নাম ছিল 'ফ্রাঙ্কফুর্টার জাইচুঙ্'। তারও অনেক পরে সতের শ' চার খ্রিষ্টাব্দের সাতাশে এপ্রিল প্রকাশিত হলো আমেরিকার প্রথম সংবাদপত্র-'দি বোস্টন নিউজলেটার'। এটি প্রকাশিত হওয়ার ফলে সংবাদপত্রের এক নতুন দিকদর্শন লাভ সম্ভব হয়।

২] ভারতীয় সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান

ভারতের সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে নাম করতে হয় 'এ. পি. আই' (অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব ইন্ডিয়া) এবং পি. টি. আই (প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের। এদের মধ্যে এ. পি. আই ঊনিশ শ' ঊনিশ খ্রিস্টাব্দে এবং পি. টি. আই ঊনিশ শ' সাতচল্লিশ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়েছিল।

৩] সংবাদপত্রের স্বর্ণযুগ

ঐতিহাসিক ও বিদগ্ধ গবেষকগণ উনিশ শতকে সংবাদপত্রের যথার্থ স্বর্ণযুগ বলে চিহ্নিত করেছেন। এ শতকের গোড়ার দিকে, আঠারো শ' কুড়ি খ্রিস্টাব্দে 'দি অবজারভার' সংবাদপত্রটি প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে প্রথম সংবাদ চিত্র প্রকাশিত হয়। আর সাংবাদিকগণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতা লাভ করলেন। আঠার শ' পঞ্চান্নতে আত্মপ্রকাশ করল 'দি টেলিগ্রাফ'। এর দশ বছর পর। আঠার শ' পঁয়ষট্টিতে জার্মানির পন্ডিত ফ্রেডারিক গ্রীন উড-এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হলো 'দিল পলমল গেজেট'। এটি পাঠক মহলে বিশেষ সমাদৃত হল। সংবাদপত্রের ইতিহাসে যুগান্তর আনল আঠার শ' আটচল্লিশ খ্রিস্টাব্দে-প্রতিষ্ঠিত হলো 'আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা'।

৪] ভারতের প্রথম সংবাদপত্র

জার্মানি, লন্ডন এবং আমেরিকা প্রভৃতি দেশে সংবাদপত্র প্রকাশিত হওয়ার পর কয়েকজন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও শিক্ষাব্রতী ভারতেও সংবাদপত্র প্রকাশের জন্য উদ্যোগী হলেন। তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে নাম করতে হয় স্যার জেমস অগাস্টাস হিকি'র। তিনি কয়েকজন শিক্ষিত ভারতীয় বন্ধুর সক্রিয় সাহায্য-সহযোগিতায় সতের শ' সত্তর খ্রিস্টাব্দের উনত্রিশে জানুয়ারি 'বেঙ্গল গেজেট' নাম দিয়ে একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করলেন। প্রায় বারো বছর চলার পর সতের শ' বিরাশি খ্রিস্টাব্দে সংবাদপত্রটি বন্ধ হয়ে যায়।

৫] লন্ডন গেজেট

লন্ডন গেজেট পত্রিকাটি আজ ইংল্যান্ডের প্রচলিত সংবাদপত্র গুলির মধ্যে সুনামের সঙ্গে প্রচলিত রয়েছে। এটির প্রথম প্রকাশকাল ষোল শ' পঁয়ষট্টি খ্রিস্টাব্দে। সমসাময়িক কালের একজন শিক্ষক হেনরী মুডিম্যান ছিলেন পত্রিকাটির প্রথম সম্পাদক। তিনি প্রথম সপ্তাহে দুবার প্রকাশিত হয় এরকম একটি পত্রিকা 'দি পার্লামেন্টারি ইনটেলিজিসার' নামে পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় এবং তৎপরতায় সাংবাদিকতা যথার্থ মর্যাদা পায়।

৬] সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগের সাংবাদিক

ষোল শ' তিপান্ন খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে আটানব্বই পর্যন্ত ইংল্যান্ডের সিংহাসনে আসীন ছিলেন রাজা ক্রমওয়েল। তাঁর আমলে সংবাদপত্র বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। সংবাদপত্রের সম্পাদকগণ রাজার কাছ থেকে অর্থ সাহায্য স্বরূপ পেতেন। ফলে কিছু শিক্ষিত, সুচতুর এবং রুচিশীল যুবক সাংবাদিকতাকে বৃত্তি হিসেবে বেছে নিলেন। তাদের মধ্যে মারচ্যামন্ট নেডহ্যাম, হেনরী ওয়েকার, পিটার জনসন প্রমুখ সাংবাদিকের খ্যাতি সবার মুখে মুখে ঘুরে বেড়াত।

৭] উনিশ শতকে আমেরিকায় সংবাদপত্র

উনিশ শতকের মাঝামাঝি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রও সংবাদপত্রের ইতিহাসে এক নতুন দিক চিহ্নিত করেছিল। আঠার শ' সাতষট্টি খ্রিস্টাব্দে 'সানফ্রান্সিসকো এগজামিনার' নামে সংবাদপত্রটি প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর এ বিষয়ে সমাদর লাভ করল। এর মাধ্যমেই প্রথম প্রকাশিত হল বিভিন্ন ফিচার, রম্য রচনা, ব্যাঙ্গ রচনা, হেডলাইনের গুরুত্ব এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবন চরিত প্রভৃতি।

৮] বাষ্প চালিত মুদ্রাযন্ত্রে মুদ্রিত প্রথম সংবাদপত্র

'দি টাইমস' পত্রিকাটি সংবাদপত্রের ইতিহাসে যথার্থই এক নব যুগের সূচনা করেছিল। জন ওয়াল্টার নামে এক শিক্ষিত ও সমাজ সেবকের সম্পাদনায় সতের শ' পঁচাশি খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সংবাদপত্রের পক্ষ থেকেই প্রথম বিদেশে নিজস্ব প্রতিনিধি, সংবাদ সংগ্রাহক ও প্রেরক নিয়োগ, সাংবাদিকের রাজসভায় গমন এবং সংবাদ সংগ্রহ প্রভৃতির ব্যবস্থা করে। তবে 'দি টাইমস'-এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে মুদ্রিত সংবাদপত্রগুলির মধ্যে প্রথম স্থান অধিকারী। প্রথমে এটি 'দি ডেলি ইউনির্ভাসাল রেজিস্টার' নামে প্রকাশিত হয়। আঠার শ' অষ্টআশিতে নাম দেয়া হয় 'দি টাইমস'।

৯] প্রাচীনতম সংবাদপত্র

গবেষকদের মতে বিশ্বের প্রাচীনতম সংবাদপত্রের নাম 'পিকিং গেজেট'। তেরোশ পঞ্চাশ খ্রিস্টাব্দের চীনের 'বেজিং' নগরী থেকে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। আবার কোন কোন পন্ডিতজনের মতে এটি সর্বসাধারণের মধ্যে প্রচারিত ছিল না। সমাজের কিছু সংখ্যক সম্ভ্রান্ত পরিবার ছিল এর পাঠক। তাই এটিকে তারা সংবাদপত্রের মর্যাদা দিতে উৎসাহী নন।

No comments:

Post a Comment